প্রকাশিত: Sat, Jan 13, 2024 1:31 AM
আপডেট: Wed, Jun 18, 2025 11:46 AM

[১]জাতীয় সম্মেলন করতে ১৪ জানুয়ারি বৈঠক ডেকেছে জাপার একাংশ

মনিরুল ইসলাম:  [২] জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করা এবং পার্টির ঐক্য বজায় রাখার জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটামের পর দলের একটি অংশ এইদিন সকাল ১১  রাজধানীর ডিপ্লোমা  ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক  বৈঠক ডেকেছে।  

[৩] এই বৈঠক দলের নীতি নির্ধারকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে। এই তথ্য জানান  নারায়ণগঞ্জ-৩  আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। তবে কাজী ফিরোজ রশীদ উপস্থিত হবেন বলে কথা থাকলেও উপস্থিত হননি।

[৪] শুত্রুবার রাতে আলাপকালে তিনি এই বৈঠকের কথা জানান। বলেন, বৈঠকেই ঠিক হবে জাতীয় পার্টির আগামীদিনে কি ভাবে চলবে। আমাদের উদ্দেশ্য জাতীয় পার্টির ঐক্য  ধরে রাখা। তিনি আরও বলেন, অব্যাহতি নিয়ে আমরা ভাবছি না। 

[৪] এদিকে, দলের একটি অংশের আগামী রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর ডিপ্লোমা  ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বৈঠক ডাকার  সংবাদ প্রচারের পর জি এম কাদের ও মুজিবল হক চুন্নুর নেতৃত্বাধীন  জাপার পক্ষ থেকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টির সকল স্তরের নেতাকে কোনো কুচক্রী মহলের অবৈধ ও অসাংগঠনিক প্ররোচণাায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। 

[৫] জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল বৃহস্পতিবার জাপার বনানী অফিসে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদের অসাংগঠানিক কাজ করার অধিকার নেই। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত। 

[৫] শুত্রুবার জাপার পক্ষ থেকে আরেকটি জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে  জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

[৬] জাপার দলীয়  সূত্র জানায়, ১০ জানুয়ারী বুধবার দলটির বনানী কার্যালয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করেন পার্টির নেতাকর্মীরা। দলের ভেতর স্বেচ্ছাচারিতা, মনোনয়ন বাণিজ্য এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগে নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের অপসারণ দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন,জাতীয় পার্টি অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা,আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লিয়াকত হোসেন খোকাসহ জাপার নেতা - কর্মীরা। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। নানান শ্লোগান দেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই সময় জাতীয় নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হওয়া প্রার্থীদের পক্ষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য সাহিদুর রহমান টেপা একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

[৭] লিখিত বক্তব্যে বলা হয় জাতীয়  নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। জাতীয় পার্টির যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন তার সাথে প্রার্থী মনোনয়ন প্রশ্নে মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু তিনি পার্টির মধ্যে বিভক্তি করতে দেননি। অথচ পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত ৪ বছরে তার সাংগঠনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অদুরদর্শ্তীা এবং অদক্ষতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। পাটির প্রার্থীদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা করা এবং তাদের এক প্রকার পথে বসিয়ে দেয়ার জন্য পার্টির দুই শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। সরকারের কাছে ধর্ণা দিয়ে ২৬ টি আসনে সমঝোতা করে সেখানেও ভরাডুবি হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, জাতীয় পার্টিকে এতটা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়া এবং নির্বাচনে ভরাডুবির দায়িত্ব নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব পদত্যাগ করে তাদের সম্মান রক্ষা করবেন। কিন্তু সে বোধদয়ও তাদের হয়নি। আমরা পার্টির সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের মনোভাব জানতে পেরেছি। 

[৮] তারা পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অপসারণ দেখতে চান। এমতাবস্থায় জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করা এবং পার্টির ঐক্য বজায় রাখার জন্য আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর তারা তাদের পদ থেকে অপসারিত বলে বিবেচিত হবেন। এই পর্যায়ে গঠনতান্ত্রিক ভাবে পার্টিতে একজন ভারপ্রাপ্ত/নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়োগ করে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। এখন একান্ত প্রয়োজনে কিছু রদবদল ব্যাতিত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য পদে অধিষ্ঠিত নেতৃবৃন্দ স্বপদে বহাল থাকবেন। 

 [৯] জাতীয় পার্টির যে সব প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, আগামীতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। এই মূহুর্তে পার্টিকে সুসংগঠিত করে একটি জাতীয় সম্মেলন করাই হবে আমাদের প্রধান কাজ।